আব্দুর রাজ্জাক (১৯১৪ – ২৮ নভেম্বর, ১৯৯৯) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং বুদ্ধিজীবী। ১৯৭৩ সালের প্রথমদিকে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পিএইচডি প্রদান করে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে মনোনীত করে।
তার জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত ছিল বিশেষত প্রাচ্যতত্ত্ব, ইতিহাস ও রাজনীতিতে। তিনি ‘শিক্ষকদের শিক্ষক’ হিসেবে অভিহিত হতেন। তার অনুগামীদের মধ্যে শুধু বুদ্ধিজীবী নয়, শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাও ছিলেন।
আব্দুর রাজ্জাক: যদ্যপি আমার গুরু রিভিউ
জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে চলমান বিশ্বকোষ বললে খুব একটা অত্যুক্তি করা হয় না। অর্থশাস্ত্র, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য, ধর্ম-সংস্কৃতি এই সবগুলো বিষয়ে তিনি বিশেষজ্ঞের মতো মতামত দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। তার পাণ্ডিত্যের খ্যাতি সর্বজনবিদিত। সমকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপীঠসমূহের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের অনেকেই একবাক্যে তার মেধা এবং ধী-শক্তির অনন্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন। এই নিভৃতচারী, অনাড়রম্বর জ্ঞানসাধক মানুষটি সারাজীবন কোনো গ্রন্থ রচনা করেননি। সভা-সমিতিতে কথাবার্তা বলারও বিশেষ অভ্যাস তাঁর নেই। তথাপি এই কৃশকায় অকৃতদার মানুষটি তাঁর মেধা এবং মনন শক্তি দিয়ে জাতীয় জীবনের সন্ধিক্ষণ এবং সংকটময় মুহূর্তসমূহে পথ নির্দেশ করেছেন। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, বলতে গেলে, চারটি দশক ধরেই তরুণ বিদ্যার্থীদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন।
সকলেই স্বীকার করেন অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক একজন প্রবাদতুল্য পুরুষ। কিন্তু তাঁর জ্ঞানচর্চার পরিধি কতদূর বিস্তৃত, আর তিনি ব্যক্তি মানুষটি কেমন সে বিষয়েও মুষ্টিমেয় অনুরাগীদের বাইরে অধিক সংখ্যক মানুষের সম্যক ধারণা নেই। ‘যদ্যপি আমার গুরু’ গ্রন্থটি পাঠক সাধারণের মনে অধ্যাপক রাজ্জাকের মনীষা এবং মানুষ অধ্যাপক রাজ্জাক সম্পর্কে একটি ধারণা গঠন করতে অনেকখানি সাহায্য করবে। এই গ্রন্থের লেখক আহমদ ছফা আমাদের সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তিনি অধ্যাপক রাজ্জাকের ছাত্র। দীর্ঘদিন মেলামেশা করার ফলে অধ্যাপক রাজ্জাককে খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখার যে দুর্লভ সুযোগ তাঁর হয়েছে, বর্তমান গ্রন্থ তার প্রমাণ।
অধ্যাপক রাজ্জাকের ওপর খোলামেলা, তীক্ষ্ন, গভীর এবং সরস এমন একটি গ্রন্থ রচনা করা একমাত্র আহমদ ছফার পক্ষেই সম্ভব। লেখক অধ্যাপক রাজ্জাকের উচ্চারিত বাক্যের শুধু প্রতিধ্বনি করেননি, ব্যাখ্যা করেছেন, উপযুক্ত পরিপ্রেক্ষিতে স্থাপন করেছেন, প্রয়োজনে প্রতিবাদও করেছেন। এখানেই গ্রন্থটির আসল উৎকর্ষ। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক নিজের কথা বলতে গিয়ে তাঁর সময় সমাজ এবং সমকালীন বিশ্বের কথা বলেছেন। সামাজিক দলিল হিসেবেও গ্রন্থটির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

প্রফেসর রাজ্জাক’এর চরিত্রের প্রণিধানযোগ্য বৈশিষ্ট্যটি আমি সব সময়ে সশ্রদ্ধ বিস্ময়ে লক্ষ করে আসছি, সেটি হল তাঁর নিজের দেশ, সমাজের প্রতি নিঃশর্ত অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকারবোধই প্রফেসর রাজ্জাককে অন্য সকলের চাইতে আলাদা করেছে। আব্দুর রাজ্জাক সাহেব মনে-প্রাণে একজন খাঁটি সেক্যুলার মানুষ। কিন্তু বাঙালি মুসলমানসমাজের সেক্যুলারিজমের বিকাশের প্রক্রিয়াটি সমাজের ভেতর থেকে, বাঙালি মসলমানের সামাজিক অভিজ্ঞতার স্তর থেকে বিকশিত করে তুলতে হবে, একথা তিনি মনে করেন।
আহমদ ছফা (১৯৯৮)
গাভী বিত্তান্তঃ উপাচার্যের গোলামি আর শিক্ষকদের নোংরা কদর্য রূপ
আহমদ ছফা 30 শে জুন, 1943 সালে গাছবাড়িয়া, চট্টগ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী মিলিয়ে তিরিশটিরও অধিক গ্রন্থের প্রণেতা। তিনি 2002 সালে মরণোত্তর একুশে পদক এ ভূষিত হন। তিনি 28শে জুলাই, 2001ইং সালে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজা শেষে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয় এই কালজয়ী সাহিত্যিককে। তিনি বেঁচে থাকবেন তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে অনন্তকাল।
বইটি রকমারি থেকে কিনতে পারবেন
[…] […]