বইয়ের নামঃ আমি তপু
লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল
সরল কাহিনী, মাত্র 121 পৃষ্ঠা, কাঠখোট্টা শব্দ বা বাক্য বা ঘটনা নেই, নেই কোন নীতিবাক্য, মাথা এলোমেলো করে দেওয়ার মত কোন বাক্য নেই।
পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে 2005 সালে ‘আমি তপু’ শীর্ষক কিশোর উপন্যাসটি অমর একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটির মূল চরিত্র আরিফুল ইসলাম তপু। সে-ই এই উপন্যাসের কথক সবেমাত্র অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। কিন্তু এই ছোট জীবনে বহু তিক্ত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছে সে।
আমি তপু রিভিউ
তপু তখন ক্লাস ফাইভে পড়ে। ছিল অনেক মেধামী এবং হাস্যোজ্জ্বল। ক্রিকেট ব্যাট কেনার উদ্দেশ্যে বাবার সাথে মার্কেটে যাওয়ার পথে ভয়ানক এক সড়ক দুর্ঘটনায় তপু অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও তার বাবা মারা যান। স্বামী হারানোর শোকে তার মায়ের বদ্ধমুল ধারনা হয় তপুই তার বাবার মৃত্যুর কারন। নিজের মায়ের কাছে তপু পরিণত হয় চরম ঘৃণার পাত্রে। নরম বিছানা আর বালিশের পরিবর্তে তপুর জায়গা হয় জনাকীর্ণ স্টোর রুমে। জীবন হয়ে যায় এলোমেলো, বাউন্ডুলে।
ক্লাসের ফার্ষ্ট হওয়া ছাত্রটি এখন ক্লাসের লাষ্ট বয়। এভাবে লেখাপড়ার অবনতি ঘটতে থাকে। বন্ধবান্ধবহীন, একা, একদম একা। কারণে-অকারণে তার মা তাকে মারধর করেন, মানসিক যন্ত্রনা দেন। আত্মীয় স্বজন, ভাই-বোন কেউ কথা বলে না তার সাথে। তার সাথে কথা বলার সঙ্গী মাত্র দুজন- বাড়ির কাজের বুয়া দুলি খালা এবং মিচকি নামের স্টোর রুমের ইঁদুর। ইঁদুরগুলোর সাথে তার বিচিত্র কথপোকথন হয়।

আমি বুঝতে পারলাম এই পৃথিবীতে আমরা কেউ নেই, আমি একেবারে একা। আমার চোখের পানি হঠাৎ করে শুকিয়ে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম যার চোখের পানির কোনো মূল্য নেই, এই পৃথিবীতে তার থেকে হতভাগা আর কেউ নেই।
তপু
দীপু নাম্বার টু: দুঃসাহসিক অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ একটি স্মৃতি
দিনের পর দিন মায়ের মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তপু সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যা করবে। তাও হয়ে উঠেনি। একঘেয়ে নিঃসঙ্গ জীবন আর বয়ে নিতে পারে না সে। একসময় গন্তব্যহীন অজানার পথে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। নিঃসঙ্গ জীবন ছেড়ে সবার চোখের আড়াল হওয়ার উদ্দেশ্যে লোকাল ট্রেনের ছাদে চড়ে বসে তপু। এমন সময় পেছন থেকে চিৎকার করে ডাকে প্রিয়াংকা নামে তার একমাত্র শুভাকাঙ্খী। এই প্রিয়াংকার কারণে ছন্নছাড়া তপু ক্রমান্বয়ে ফিরে আসতে থাকে স্বাভাবিক জীবনে। একসময় সে হয়ে যায় চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন।
তপু স্বপ্ন দেখতো একসময় মা তাকে বুকে জড়িয়ে নেবে, চুমু খাবে, পাশে বসে ভাত খাইয়ে দিবে, আদর করে ডাকবে। কিন্তু মা ইদানিং কি একটা অসুখে ভুগছে, অপারেশন হবে। তপুর চিন্তা বেড়ে যায়, মা কি সুস্থ্য হবে, মায়ের বুকে মাথা গুঁজে ডুকরে ডুকরে কেঁদে নিজের অশান্ত মনটাকে শান্ত করতে পারবে। নাকি মায়ের কাছে বাউন্ডুলে, অপদার্থ আর ঘৃনার পাত্রই রয়ে যাবে।
‘আমি তপু’ উপন্যাসটি পাঠ শেষে এই উপন্যাসের অন্তিম লাইনটি পাঠকের বেলায় যদি মূর্ত হয়ে উঠে, সেটা অস্বাভাবিক হবে না।
চোখে পানি, আর ঠোঁটের কোণায় একটু হাসি- কী বিচিত্র একটি দৃশ্য!
[…] আমি তপু – চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন… […]