বই : জীবন ঘষে আগুন (ছোট গল্প)
লেখক : হাসান আজিজুল হক
পৃষ্ঠা: 96
প্রকাশনী : সাহিত্য প্রকাশ
মূল্য : 100 টাকা
বইটি তিনটি ছোট গল্প নিয়ে রচিত, বইয়ের সূচিপত্রঃ
- শোণিত সেতু – 7
- খাঁচা – 34
- জীবন ঘষে আগুণ – 49
জীবন ঘষে আগুন রিভিউ
গল্পটা রাঢ় অঞ্চল এর কথা দিয়ে তুলে ধরেছেন লেখক। রাঢ় শব্দটির অর্থ রুক্ষু, যেখানে মাটি কর্কস, কোন কিছু সহজেই জন্মায় না। কোন কিছু জন্মায় না বলতে এখানে ফসলের কথা বলা হয়েছে। খুব সহজেই ফসল আবাদ করা যায় না, প্রচন্ড শীত, মাটি রুক্ষ, আবার দিনের বেলা প্রখর সূর্যের তাপ । এখানে মানুষের জীবন থেমে থাকেনি। মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম, তাদের ভালবাসা, হিংসা-বিদ্বেষ, একে অপরের প্রতি বা দলগত দ্বন্ধ এখানে সবকিছুই আছে। তারপরেও সব মিলিয়ে তাদের জীবন কেমন এখানে এ গল্পের ভিতরে আমরা দেখতে পাবো।
হাসান আজিজুল হক লিখেছেন, “তপ্ত কটাহের মত নির্মেঘ আকাশ থেকে যখন আগুন ঝরছে, তখন পেটমোটা ও নধরকান্তি বাবুরা পরিতৃপ্ত ও প্রসন্ন মনে হাতির পিঠে উঠে মেলায় যাচ্ছে। এখানে লেখক নধরকান্তি ও পেটমোটা বাবু বলেছেন এজন্য যে জমিদারের বাবুরা তারা খেয়ে দেয়ে আরাম আয়েসে ভালোই আছে। কিন্তু ওই যে রাঢ় অঞ্চেলের পল্লীর ছেলে মেয়েরা যেখানে একমুঠো ভাতের জন্য তাদের হাহাকার করতে হয়। সেই ছেলে মেয়েগুলো এই হাতির পেছনে দৌঁড়াচ্ছে, হাতি যে জায়গা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, হাতির ওই পাড়া যেখানে পড়ছে ওইখানের ধুলোবালি গায়ে মাখছে এবং তারা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে যে, তারা যেন এই হাতির মত মোটাসোটা হয়।
এখানে এই প্রার্থনার ভিতর দিয়ে আমরা বুঝতে পারি তাদের জীবন কতটা নির্মম, কতটা কষ্টের। দুমুঠো খাওয়ার জন্য হাতির মোটা হওয়ার সাথে নিজেদের শরীর যেন মোটা হয় এই প্রার্থনাটাই তারা করেছে। আমরা যেমন মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ একটা প্রার্থনা পেয়েছি “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে”। এই প্রার্থনায় যেমন ওই সময়ের ওই যুগের মানুষের প্রত্যাশা, গাড়ি-বাড়ি, ধন-সম্পদ এটা নয় ঠিক।

এখানে একটা প্রতিযোগীতা হয় হাল-চাষ দেয়া নিয়ে, এই রাঢ় অঞ্চল এর কৃষক শ্রেণীর ছেলেরা বিশেষ করে প্রকৃতির নিয়মে বেড়ে উঠে যখন বিশ-বাইশ বছর বয়স তাদের বুকের ছাতি এমনিতেই স্ফিত হয়ে যায় চঁওড়া হয়ে যায়, তাদের শিরাগুলো শাবলের মত শক্ত হয়ে যায়, তারা কর্মঠ হয়, তারা হিংস্র পশুদের মত শক্তিশালী হয়ে যায়। কেন! এই প্রকৃতির কাছ থেকে তাদেরকে ফসল ফলানোর জন্য অনেক কিছু ছিনিয়ে নিতে হয়। আবার ত্রিশ-বত্রিশ হলেই তাদের গায়ের চামড়া ঢিলা হয়ে যায় তারা শীর্ণ হয়ে যায়, চল্লিশ হতে না হতেই তাদের বার্ধক্য চলে আসে, শেষ জীবনে চলে আসে। তারা পৃথিবী যে কোনভাবে চলছে প্রকৃতি তার বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন জায়গায় যে একেক রকম একেকে জায়গায় তার যে রূপ-ঐশ্বর্য্য এটা তারা জানে না। রাঢ় অঞ্চলের বাইরেও যে কিছু থাকতে পারে, তারা তা ভাবতে পারে না। পাথরে পাথরে ঘসে যেমন আগুন জ্বালাতে হয় অনেক কষ্টে অনেক পরিশ্রম করে ।
ঠিক এই রাঢ় অঞ্চলের মানুষের একদম হাড়ে হাড় ঘসে জীবন ঘসে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয়েছে। এজন্য এ গল্পের নামকরণ হয়েছে জীবন ঘসে আগুন।
লেখক পরিচিতঃ
হাসান আজিজুল হক ( 2 ফেব্রুয়ারী 1939 – 15 নভেম্বর, 2021)
বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় একটি নাম হাসান আজিজুল হক 1939 সালের 2 ফেব্রুয়ারী বর্ধমান জেলার যবগ্রামে তার জন্ম। তিনি 1958 সালে রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক এবং 1960 সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। 1960 সাল থেকে তিনি কয়েকটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। পরবর্তীতে 1973 সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং 2004 সালে প্রফেসর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। 2009 সালে ‘বঙ্গবন্ধ চেয়ার’ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
তাঁর অসাধারণ সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুরষ্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি 1970 খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, 1999 সালে একুশে পদক ও 2019 সালে স্বাধীনতা পুরষ্কার লাভ করেন। পাশাপাশি লেখক শিবির পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার সম্মাননা অর্জন করেন। সাহিত্যচর্চায় স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি 2018 সালে “সাহিত্যরত্ন” উপাধি লাভ করেন। 2012 সালে ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং 2018 সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মাননাসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করেন। তিনি 15 নভেম্বর, 2021ইং তারিখে বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
রিভিউ পড়ুন : আগুনপাখি: রক্তক্ষরণ ইতিহাসের এক শিল্পিত দলিল
বইটি কিনতে পারবেন রকমারি থেকে