দি স্টোরি অভ দ্য তাজমহল: ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে সম্রাট শাহজাহান অসাধারণ স্থাপত্য কীর্তি সৃষ্টি করেন।
দি স্টোরি অভ দ্য তাজমহল রিভিউঃ
1631 সাল, মোগল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী তার চতুর্দশতম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় সম্রাটকে একটা শেষ অনুরোধ করেন তিনি যেন তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এমন একটা মকবরা নির্মাণ করেন, যা পৃথিবীর বুকে যেমনটা তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন বেহেশতের মাত্রা যোগ করবে। ভগ্নহৃদয় মোগল সম্রাট শাহজাহান, তার প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে উজ্জ্বল দীপ্তিময় আর জাঁকজমকপূর্ণ একটা স্মৃতিস্তম্ভ (মকবরা) নির্মাণের আদেশ দেন। তাদের প্রেম অসাধারণ আবেগের এক অপূর্ব কাহিনী: যদিও তিনি প্রায় সবসময়েই সন্তানসম্ভবা থাকতেন তারপরেও মমতাজমহল প্রতিটা সামরিক অভিযানে তার স্বামীর সঙ্গী হয়েছেন, যার একটাই উদ্দেশ্যে তারা যেন কখনও একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না হন।
কিন্তু মমতাজ সহসাই সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন, শোকে অন্ধ শাহজাহান দুই বছরের জন্য নিজেকে আড়াল করে ফেলেন, পার্থিব ভোগবিলাস এবং দ্যুতিময় রত্ন আর মূল্যবান পরিচ্ছদের পরিবর্তে ধবধবে সাদা রঙের শোকের পোশাক পরিধান করেন। তিনি তার প্রাসাদের প্রিয়তমা স্ত্রীর আদিষ্ট স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে নিজের সমস্ত সামর্থ্য নিহিত করেন। ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে শাহজাহানের রাজধানী আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটা উদ্ধত কিন্তু অসাধারণ স্থাপত্য কীর্তি সৃষ্টি করেন। নির্মিত এই মকবরাকে আমরা আজ তাজমহল নামে চিনি, পৃথিবী বিখ্যাত ভালোবাসার স্মৃতিসৌধ।
ত্রুটিহীন প্রতিসাম্যের দীপ্তিময় একটা মকবরা তাজমহল নির্মাণে সফেদ মর্মর আর গোলাপী বেলেপাথর এবং মূল্যবান রত্নরাজির বৈভবখচিত একটা অলঙ্করন ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ হাজার শ্রমিকের শ্রম আর মোগল কোষাগারের সম্পদ ম্লান করে মকবরার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে প্রায় বিশ বছর সময় লেগেছিল। তাজমহলের বিশাল আকৃতি সত্ত্বেও-প্রধান গম্বুজটা 240 ফিট উঁচু আর এর আলম্ব 12000 টনের অধিক ভার বহন করছে। তাজমহলের মূল্ মকবরাকে চারপাশের সবুজ উদ্যান আর জলাধারের জলবিম্বের ওপর আপাত নির্ভার হয়ে যেন ভেসে রয়েছে বলে মনে হয়। তাজমহলের সবচেয়ে কট্টর সমালোচকও তাজের রূপকথাতুল্য নাজুক সৌন্দর্যে বিমোহিত হন। [দি স্টোরি অভ দ্য তাজমহল]
তাজমহলকে সমসাময়িক কালের সবাই একবাক্যে শাশ্বত বিস্ময় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সপ্তদশ শতকের এক ফরাসি পর্যটকের বীক্ষন অনুসারে এই মকবরার স্থান ‘বিশ্বের বিস্ময়ের মাঝে মিশরের পিরামিডের তুলনায় অনেক উঁচুতে হওয়ার দাবিদার।’ এডওয়ার্ড লিয়ার রায় দেন, ‘এই অপূর্ব মনোরম স্থানের বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করাই বোকামী কারণ কোনো শব্দের পক্ষে এর সৌন্দর্যকে ধারণ করা সম্ভব নয়। অতএব পৃথিবীর বাসিন্দাদের দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়-একদিকে যারা তাজমহল দর্শন করেছেন আর অন্যদিকে যারা করেননি।’

কিন্তু শাহজাহানকে তার এই আবিষ্টতার জন্য আরো বড় মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছিল। আগ্রা দূর্গে নিজের সন্তান কর্তৃক অন্তরীণ অবস্থায়, নদীর অপর তীরে অবস্থিত প্রিয়তমার সমাধিসৌধের দিকে তাকিয়ে, তিনি জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করেন। তাজমহল ভাইকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে, পুত্রকে পিতার বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেয় যা সতের শতকের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যকে অপরিবর্তনীয় অধঃপতনের দিকে নিয়ে যায়।
- ‘মনোযোগ আকর্ষন করে, সুখপাঠ্য….একটা চিত্তাকর্ষক কৃতিত্ব’-গার্ডিয়ান।
- ‘একটা জটিল পর্বতপ্রমাণ কাহিনী, আমি সন্দিগ্ধ আর কখনও এত সুন্দর করে বর্ণিত হবে’- মেইল অন সানডে।
- ‘ গল্পটা এত সুন্দর করে বিবৃত হয়েছে যে কিছু কিছু অধ্যায় পাঠ করার সময় কোন রোমাঞ্চকর উপন্যাস থেকে উদ্ধৃত মনে হয়…জনপ্রিয় ঐতিহাসিকের অর্থবহ সেরা ধারণা।’ – সানডে টেলিগ্রাফ।
- ‘প্রেসটনের লেখা পাঠ করা উচিত। দুর্দান্ত একটা খণ্ডকথা।’ – সানডে টাইমস।
দ্য পিরামিড: প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্যের অন্যতম রহস্য
তাজমহলের অন্তরালের কাহিনীর মাঝে রয়েছে গ্রীক বিষাদের ছন্দোলয়, জ্যাকোবীয় প্রতিশোধস্পৃহার সংহার রূপ এবং গ্রান্ড অপেরার আবেগময়তা। তাদের পূর্ববতী কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কথকের দক্ষতা আবেগময় বিবরণমূলক ইতিহাসের এই কাহিনীতে অ্যালেক্স রাদারফোর্ড (ডায়ানা আর মাইকেল প্রেসটন) প্রদর্শনে সমর্থ হয়েছেন যেখানে মর্মরের খ্যাতিমান স্থাপত্যের সেরা নিদর্শনে তারা মানবিক মুখাবয়ব আরোপ করেছেন। [দি স্টোরি অভ দ্য তাজমহল]
বইয়ের নামঃ
এ টিয়ারড্রপ অন দ্য চিক অভ্ টাইম
দি স্টোরি অভ দ্য তাজমহল
মূলঃ অ্যালেক্স রাদারফোর্ড
অনুবাদঃ সাদেকুল আহসান কল্লোল
পৃষ্ঠাঃ 369
প্রকাশনীঃ রোদেলা প্রকাশনী