দীপু নাম্বার টু এই কিশোর উপন্যাসটি মুহাম্মদ জাফর ইকবাল 1984 সালে লিখেছিলেন। এ উপন্যাসে রচিত হয়েছে ছোটবেলার স্কুলের স্মৃতি, বন্ধুদের সাথে ছোট ছোট যুদ্ধ জয়ের কাহিনী, দল বেধেঁ খেলার আনন্দ, মা-বাবার ভালবাসাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করাসহ অনেক কিছু। ‘দীপু নাম্বার টু’ কিশোর উপন্যাসটি আমাদের অন্তরে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।
দীপু নাম্বার টু রিভিউ
দীপু ক্লাসে এই নাম আরেক জনের থাকায় এই উপন্যাসের মূল চরিত্রের নাম হয়েছে দিপু নাম্বার টু। ভালো নাম মুহম্মদ আমিনুল আলম, ক্লাস এইটে নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে দীপুর হঠাৎ খারাপ লাগছিলো। প্রতি বছর নতুন জায়গায় গিয়ে নতুন ক্লাসে ঢুকতে হয় তাকে। তার আব্বা প্রত্যেক বছর নতুন জায়গায় যান, তাই বছর বছর স্কুল বদলাতে হয় । তার আব্বা শুধুমাত্র ওর জন্যই নাকি এক বছর অপেক্ষা করেন, তানাহলে ওনার কোথাও তিন মাসের বেশি সময় ভালো লাগেনা।
দীপু মোটামুটি ভাল ছাত্র ফার্ষ্ট না হলেও সেকেন্ড থার্ড হয় খুব সহজেই। ডিটেকটিভ এবং অ্যাডভেঞ্চার বই পড়তে ভালবাসে। যেমন- যক্ষেন ধন, আবার যক্ষের ধন, তারপর টম সয়ার, হাক ফিনের দুঃসাহসিক অভিযান। ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলতেও পছন্দ করে সে। সীটে বসে সাইকেল চালাতে ও সাঁতারও পারে, কেউ তার সাথে মারামারি করতে আসলে অল্প অল্প তাও পারে । দিপু বই বাধাঁই করতে পারে, আর শর্ট সার্কিট হয়ে ফিউজ পুড়ে গেলে মেইন সুইচের ফিউজ বদলে ঠিক করে ফেলতে পারে। এটা তার আব্বা তাকে শিখিয়ে দিয়েছে।
দীপুর সাথে তার আব্বার সম্পর্ক একটু অদ্ভুত। মোটেই অন্য দশজন আব্বা আর তাদের ছেলের মতো নয়। দীপু তার আব্বার সাথে এমনভাবে কথা বলে যেন তিনি তার ক্লাসেরই ছেলে। নিজের আম্মাকে কখনও দেখেনি, আব্বাই তাকে বড় করেছেন একেবারে ছেলেবেলা থেকে কাজেই দীপুর আব্বাই তার সবচেয়ে বড় বন্ধু।
নতুন স্কুলে সবার সাথে তার দ্রুত বন্ধুত্ব হয়ে গেল। শুধু বয়সে একটু বড়। স্বাস্থ খুব ভাল নয়, গায়ে খুব জোর। নাম তারিক, ছেলেরা আড়ালে তারিক গুন্ডা বলে ডাকে। এতে তারিক রাগ করে না বরং খুশিই হয়। তারিককে ক্লাসের সবাই ভয় পায়। অন্য সবার মতো দীপুর ওপরও দাপট দেখাতে চায় তারিক। তবে দীপু ক্লাসের অন্য সবার মতো ছিল না। সেও তারিকের সাথে টেক্কা দিয়ে চলল, মার খেয়ে তক্তাও হতে হয়েছে দীপুকে। ঘটনাক্রমে তারা একটি পানির ট্যাংকের উপর ওঠার প্রতিযোগীতা করে, তারিক এবং দীপু। জীবন বাজি রেখে অন্য এক বন্ধুকে বিপদের হাত রক্ষা করে। সেই থেকে তারিক হয়ে যায় দীপুর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। এক সময় তারা পারিবারিক জীবনের অনেক নিমর্ম বাস্তবতার গল্প দুজন দুজনের সাথে ভাগ করে নেয়।

তারিক চিতাবাগের একটি পাথরের মুর্তি উপহার দেয় দীপুকে তারিক তার নাম দেয় কালাচিতা। পরবর্তীতে বন্ধুরা মিলে এক দুঃসাহসিক অভিযানের মাধ্যমে উদ্ধার করে কালাচিতার রহস্য। মৌর্যসভ্যতার একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা খুঁজে বের করেছে বলে বাংলাদেশ সরকার তারিককে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছে। তারিকের এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্যে জায়গাটার নাম তারিকের দেয়া কালাচিতাই থাকবে।
আমি তপু – চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন নিঃসঙ্গ এক কিশোরের বেঁচে থাকার ইতিহাস
বইয়ের নামঃ দীপু নাম্বার টু
লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল
বইয়ের ধরণঃ কিশোর সাহিত্য
প্রকাশকালঃ 1984
প্রকাশনীঃ সময় প্রকাশন
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ 115
লেখকের কথাঃ
‘দীপু নাম্বার টু’ এখনও আমার খুব প্রিয় উপন্যাস। আমার খুব সৌভাগ্য এই দেশের ছেলেমেয়েরা এই উপন্যাসটিকে ঠিক আমার মতোই গভীর ভালোবাসার সাথে গ্রহণ করেছিল। প্রায় তিন দশক আগে লেখা এই উপন্যাসটি আজ আবার নূতন আঙ্গিকে সময় প্রকাশন থেকে বের হতে যাচ্ছে, এই সময়টিতে আমি আমার শিশু কিশোর পাঠক পাঠিকাদের গভীর মমতার সাথে স্মরণ করছি।
– মুহম্মদ জাফর ইকবাল
[…] […]