দুটি হত্যাকান্ড নিয়ে লেখক মশিউল আলম “ দ্বিতীয় খুনের কাহিনি ” উপন্যাসটি রচনা করেন ।
30 মে, 1981, ভোররাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নৃশংস হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডটি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা ঘটিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীন অন্যতম দুই চৌকশ মুক্তিযোদ্ধা সেনা কমান্ডার জেনারেল জিয়া এবং মনজুর । জেনারেল জিয়া হত্যাকান্ডের ঠিক দু’দিন বাদে অর্থাৎ 1 জুন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ফায়ারিং রেঞ্জে খুন হন জিওসি জেনারেল আবুল মনজুর (বীর উত্তম)।
দ্বিতীয় খুনের কাহিনি রিভিউ
জেনারেল জিয়া তৎকালিন সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি ছিলেন সৎ, শৃঙ্খল ও অকুতোভয় সেনাসদস্য। আর ছিলেন বাংলাদেশের অসংবাদিত নেতা হওয়ার লোভ। তাই সেনা প্রধান হওয়া সত্বেও তিনি চেয়েছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান ও রাজনৈতিক দলেন চেয়ারপার্সন হতে। সেভাবেই তিনি বিএনপি গঠন করলেন, চেয়ারপার্সন ও রাষ্ট্রের প্রধান হলেন অগণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের বঞ্চিত করে পাকিস্তান ফেরত সুবিধাবাদী সেনাসদস্যদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সুবিধা দেন। সেনা প্রধান হওয়ার যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তি জেনারেল মনজু’কে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে জিওসি করে পাঠিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের দাসত্ব করা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে করেন সেনা প্রধান। এরশাদের পরামর্শে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের চট্টগ্রাম ও অন্যান্য স্থানে বদলী করেন। বেশিরভাগ পাঠানো হয় চট্টগ্রামে জেনারেল মনজুর অধীনে। জিয়া এরশাদকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনবার্সিত করেন এবং চারশ’র বেশি মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসিতে ঝোলান, রাজাকারদের দেশে ফিরিয়ে নাগরিকত্বসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ন পদে আসীন করেন। ফলে জিয়ার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্য’রা ক্ষীপ্ত হতে থাকে। জিয়া হত্যার দ্বায়ভার পড়লো জেনারেল মনজুর উপর।

তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা: নির্মম ইতিহাস
1 জুন 1981। হত্যাকারী অফিসারদের সঙ্গে সপরিবারে পালাচ্ছেন জেনারেল মনজুর। কিন্তু বিকালের মধ্যে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হন। আদালতের মুখোমখি হতে চাইলেন আটক জেনারেল মনজুর। কিন্তু সন্ধ্যার মধ্যেই থানা থেকে তাঁকে নেওয়া হলো সেনা হেফাজতে। মধ্যরাতে, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে একটি বুলেটের আঘাতে প্রাণ হারালেন তিনি। ঘটল আরেকটি হত্যাকান্ড। এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের গল্প নয় তো এটি? মূল কলকাঠি এরশাদ সাহেবের নয় তো? হ্যাঁ এগুলো নিজের দায়িত্বে অনুসন্ধান করার জন্য পড়ে ফেলুন “দ্বিতীয় খুনের কাহিনি”।
“দ্বিতীয় খুনের কাহিনি” মূলত একটি ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। লেখক যেহেতু উপন্যাস লিখেছেন, তাই আছে কিছু তথ্যের ও সংলাপের অসংলগ্নতা। সচেতন পাঠকবৃন্দ বইটি কখনো সত্য ইতিহাস এবং কখনো উপন্যাস হিসেবে পড়লে এর কাহিনি গোয়েন্দা গল্পের চেয়েও অধিক উত্তেজক হবে।
বইটির পিডিএফ এই লিংক থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন