Site icon Gohine Dola

দ্যা আলকেমিস্ট: মহামূল্যবান ‍গুপ্তধনের সন্ধান

দ্যা আলকেমিস্ট

দ্যা আলকেমিস্ট, পাওলো কোয়েলহো’র একটি পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান ভান্ডার। বইটি জীবন দর্শন, পরিবর্তন ও চিত্তবিনোদনের জন্য পাঠক সমাজে বিরাট অবদান রেখেছে।

দ্যা আলকেমিস্ট নিয়ে মন্তব্যঃ

দ্যা আলকেমিস্ট রিভিউ

গল্পের নায়ক সান্তিয়াগো ষোল বছর পর্যন্ত পাঠশালায় ছিল। সে লাতিন পড়েছে, পড়েছে স্প্যানিশ আর ধর্মতত্ত্ব। বাবা মা চেয়েছিল সে হবে যাজক, পরিবারে আসবে সম্মান। কিন্তু তার ইচ্ছা ছিল পৃথিবীকে জানার, মনে হয়েছে ঈশ্বর আর পাপ সম্পর্কে জানারচে এসব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সাহস করে বাবাকে বলেই ফেলল, যাজক হতে চায় না। চায় ঘুরে ঘুরে পৃথিবীটাকে দেখতে। বাবা আর কোন কথা না বলে পরদিন ছেলের হাতে ধরিয়ে দেয় স্প্যানিশ সোনার তিনটা মোহর। কোনদিন ছেলের কাজে লাগবে বলে রেখেছিল। বাবা বলল, পশুর পাল কিনে নিও। মাঠ থেকে মাঠে ঘুরে বেড়াও। বাবার আশীর্বাদ পড়ল ছেলের উপর। সান্তিয়াগো দেখতে পায় বাবার চোখজোড়া। অবাক হয়ে দেখে, সেখানেও পৃথিবী ঘোরার উদ্দাম নেশা ঝিলিক খেলে যাচ্ছে। এখনো সে কামনা মুছে যায়নি। যুগ যুগ ধরে প্রোথিত বুকের ভিতর।

সান্তিয়াগোর আছে একটি ভারি জামা, একটি বই আর একদল ভেড়া। আর আছে হররোজ স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকার সাহস। আন্দালুসিয়ান মাঠে মাঠে এক সময় ক্লান্ত হয়ে যেতেই পারে সে, তখন প্রিয় ভেড়াগুলোকে বিক্রি করে দিয়ে পাল তুলে দিবে সাগরের বুকে। উত্তাল সমুদ্রের বুকে ভাসতে ভাসতে হরেক রকমের নগর দেখা হয়ে যাবে, দেখা পাবে অতুল রূপের সব রমণীর, দেখা পাবে বিচিত্র সব সুখের। পৃথিবী বিশাল, এখানে ক্লান্তির কোন স্থান নেই, তাকে শুধু ভেড়ার পাল চড়িয়ে যেতে হবে, তারপর তাকিয়ে দেখতে হবে অনির্বচনীয় সব দৃশ্য। আর স্বপ্নে দেখা মিশরের গুপ্তধন খুজে বের করতে হবে।

পথিমধ্যে পরিচয় হয় সালেমের রাজা দাবী করা এব বৃদ্ধের সাথে। বৃদ্ধ তাকে উরিম ও থুমিম নামক দুটি অমূল্য পাথর দিয়ে বললেন ‘কিছু পাবার চেষ্টা করলে পুরো বিশ্বব্রহ্মান্ড তোমাকে তা পাইয়ে দেয়ার জন্য ফিসফাস করতে থাকবে।’ এই কথাটি প্রায়শ মনে করে সান্তিয়াগো অনুপ্রানিত হয়। একসময় সব ভেড়া বিক্রি করে দেয় সে, মিশরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে। যাত্রার পর পরই সব টাকা ছিনতাই হয়ে যায় আফ্রিকার এক বাজারে । একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। স্ফটিকের এক দোকানে কাজ নেয় সে, বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করে দীর্ঘদিন পরে প্রয়োজনীয় টাকা সংগ্রহ করে আবার নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে। পাড়ি দিতে হবে দুর্গম সাহারা মরুভূমি। চলার পথে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সাহায্য করে সাহারা মরুভূমিতে বিপদগ্রস্থ মানুষদের।

এখানে ফাতিমা নামের এক মেয়ের সাথে দেখা হয় ও প্রেমে পড়ে যায়। শুরু হয় ভালবাসা এবং স্বপ্ন পূরনের দ্বদ্ধ। ফাতিমা তাকে আশ্বস্ত করে তার স্বপ্ন পূরণের পথে সে বাধাঁ হয়ে দাড়াঁবে না। আবার যাত্রা শুরু করলো, যেতে যেতে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মূখীন হয় সান্তিয়াগো। পথিমধ্যে কথপোকথন হয় আলকেমিস্ট নামের একজন রহস্যময় ব্যক্তির সাথে যে লোহাকে স্বর্ণে রূপান্তর করতে পারে। আলকেমিস্ট সান্তিয়াগোর মনোবলে মুগ্ধ হয়ে তাকে স্বপ্ন পূরনের পথ দেখায়। অবশেষে পিরামিডের দেশ মিশরে গিয়ে পৌছায়। সান্তিয়াগো তার স্বপ্নের গুপ্তধনের রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে গুপ্তধনের চেয়ে দামী কিছু পেয়েছিল মিশরের পিরামিডে। কিন্তু কি সেই মহামুল্যবান ‍গুপ্তধন সান্তিয়াগো পেয়েছিল তাহা জানতে হলে অবশ্যই অল্পসংখ্যক পৃষ্ঠার এই ঐতিহাসিক দ্যা আলকেমিস্ট বইটি পড়তে হবে।

আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ: জুলভার্ন এর অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস

দ্যা আলকেমিস্ট এর শিক্ষনীয় বিষয়

1) অজানা কোন কিছু নিয়ে ভয় না করে নতুনকে যথাযথ মূল্যায়ন করা।
2) সত্যকে গোপন করে কখনোই সফল হওয়া যায় না।
3) একঘেয়েমী পরিহার করে নিত্যনতুন কাজকে আলিঙ্গন করা।
4) সব সময় বর্তমানে বাচাঁর চেষ্টা করা।
5) দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করা।
6) স্বপ্নকে বড় করে দেখা।
7) আত্মসমর্পন না করে লেগে থাকা।
8) নিজের পথ অনুসরন করা।
9) ব্যর্থতাও সফলতা মেনে নিয়ে কাজ করে যাওয়া।
10) বিশ্বাসীরা ঠকে না।

লেখক পরিচিতি

পাওলো কোয়েলহো একজন ব্রাজিলীয় ঔপন্যাসিক এবং গীতিকার। তিনি ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেইরোতে জন্মগ্রহণ করেন। তার সবচেয়ে বিখ্যত উপন্যাসের নাম দ্যা আলকেমিস্ট যা ৮০ টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার লেখায় ভালোবাসা, আধ্যাত্মিকতা এবং দর্শনের প্রভাব মুখ্য।

দ্য আলকেমিস্ট

Exit mobile version