‘দ্য পিরামিড’ ঐতিহাসিক এই বইটি ইসমাঈল কাদরী লিখতে শুরু করেন আলবেনিয়াতে অবস্থান কালে আর তা শেষ করতে হয় দেশের বাইরে ফ্রান্সে বসে।
দ্য পিরামিড রিভিউ
পিরামিড হলো মিশরের গিজায় অবস্থিত প্রাচীন মিশরীয় রাজা ফারাওদের সমাধিক্ষেত্র। মাটি খুড়ে বা ছোট মিনার গড়ে তৈরি করা সাধারণ সমাধির মতো ছিলো না এই সমাধিক্ষেত্রগুলো। বরং এগুলো তৈরি করা হয়েছিল পাথরের পর পাথরের স্তুপ দিয়ে বিশাল পিরামিড আকারে।
প্রাচীন পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্য স্থাপনার মধ্যে গিজার বৃহৎ পিরামিড অন্যতম। ঐতিহাসিক ও আর্কিওলজিস্টদের মতে, প্রায় দুই মিলিয়ন পাথর খণ্ড ব্যবহার করা হয়েছিল এই পিরামিডটি তৈরি করতে। পাথরগুলোর গড় ওজন ছিলো 2.5 টন। যখন এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় তখন এই 481ফুট উচুঁ পিরামিডই ছিলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা।
বৃহৎ এই পিরামিডটি তৈরি করেছিলেন ফারাও চিওপস। ইতিহাসে তিনি ফারাও খুফু নামে পরিচিত। খ্রিষ্টপূর্ব 2547 থেকে 2524 পর্যন্ত সময়ে মিশরের শাসক ফারাও খুফু তার নিজের দীর্ঘ এই সমাধি স্তম্ভটি তৈরি করেছিলেন। গিজার পিরামিড বলতে যে ছবি আমাদের চোখের সামনে ভাসে, তা খুবই অপূর্ণাঙ্গ। মূলত একেকটা পিরামিড এতো বড়ো যে, ক্যামেরার ফ্রেমে তাকে আটকানো যায় না, তার বর্ণনাও স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। ‘দ্য পিরামিড’।।
পাশাপাশি তিনটি পিরামিড গিজায়-ফারাও খুফু, খাপড়ে ও মেনকাউড়ে। পাশে আরো কয়েকটা ছোট ছোট পিরামিড আছে যার গায়ে ধ্বংস ভর করছে। এই বিশাল চত্বরের সামনে সদাজাগ্রত প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে স্ফিংস, অর্ধেক মানুষ অর্ধেক সিংহের আকৃতির দেবতা। পিরামিডের চেয়ে অধিক বিস্ময়কর এই স্ফিংস। কারণ এতো বড় অ্যালাবেস্টর পাথর মিশরে দুস্প্রাপ্য এবং বিদেশ থেকে নিয়ে এসে তাকে কীভাবে বসানো সম্ভব, যার ওজন এক লাখ পঁচিশ হাজার টন? এ জন্যই বহু প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং কিছু কিছু মিশরীয় মতবাদে বিশ্বাসীদের ধারণা, স্ফিংস ও পিরামিড কোনো মানুষের গড়া ভাস্কর্য নয়। তাদের মতে, এসব ভিন গ্রহের কেউ বানিয়েছে। না হলে স্ফিংসের মুখ এতো কিম্ভুত কেন?
স্ফিংসের মুখ আসলেই বিচিত্র। এক দিক থেকে তা নারীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, অন্যদিকে পুরুষের। এসব দেখে নেপোলিয়নের এক গবেষক প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘মোনালিসা কি স্ফিংসের প্রেরণায় আঁকা?’

পিরামিডের গঠনশৈলী আমরা যেভাবে আলোকচিত্রে দেখি, মোটেই সে রকম নয়। আলোকচিত্রে পিরামিডগুলো এতো ছোট হয়ে যায়, মনে হয় মাটির উপর দাঁড়ানো ছোট ছোট ত্রিভুজ। কিন্তু পিরামিড গড়া হয়েছে চৌকা পাথরের অসংখ্য টুকরো সাজিয়ে। প্রথম তাকের উপর দ্বিতীয় তাক বসানো হয়েছে একটু ভেতরে চেপে। ফলে ওপরের আয়তন ছোট হয়েছে। এভাবে ছোট হতে হতে শীর্ষে গিয়ে তা শেষ হয়েছে। একটি মাত্র খণ্ডে। বহু দূর থেকে তোলা ছবিতে এসবের কিছুই আসে না। অথচ এসব পাথর খণ্ডের সবচেয়ে ছোটটির ওজনই আড়াই টন। ‘দ্য পিরামিড’।।
পিরামিডের রহস্য কিন্তু এতেই শেষ হয়ে যায় নি। পিরামিডের বহিরাঙ্গের থেকে ভেতরটা সম্পুর্ণ ভিন্ন। অন্দর বিবেচনা করলে আসলে এ এক তাজমহল। মানে কবরখানা। পিরামিডের অভ্যন্তরে আছে অসাধারন সুন্দর, কিন্তু ভয়ানক রহস্যময় পথ। প্রতিটি পথেই ফাঁদ পাতা, যা বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সব ফারাওয়ের কবরের মতো পিরামিডেরও রয়েছে ভ্রান্ত গলি। স্বাভাবিক বুদ্ধি যেখানে বিভ্রান্ত হয়। এরই চরম দৃষ্টান্ত আছে মেনকাউর পিরামিডে। মেনকাউরের নিচ পর্যন্ত পানি নিয়ে আসার জন্য নীল নদ পর্যন্ত যে রাস্তা আবিস্কৃত হয়েছে, তা বিজ্ঞানীদের অবাক করে দিয়েছে। পিরামিডের সবচেয়ে বড় বিস্ময় এর ত্রিকোণোমিতিক হিসাব এবং আনুভূমিক গঠনে। পিরামিডের প্রতিটি কৌণিক রেখার সাথে মেলানো হয়েছে মহাকাজের নক্ষত্ররাজিকে। দক্ষিণ কোণে থেকে শীর্ষে তাকালে দেখা যায় ধ্রুবতারা। উত্তর থেকে দক্ষিণে তাকালে বৃশ্চিকের কেন্দ্রবিন্দু। সেও শুধু একটি মাত্র দিনে, যেদিন সম্রাট খুফু মারা গিয়েছিলেন, অর্থাৎ দশই ডিসেম্বর। একইভাবে পশ্চিম দিক দিয়ে তাকালে শীর্ষে দেখা যাবে আদম সুরাতের মাথার তিনটি তারা, এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যা মিশরের বসন্তকাল। দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে তাকালে দেখা যাবে সপ্তষিমন্ডলের লুব্ধক, জুনের পনেরো তারিখ যেদিন সম্রাটের জন্ম। সম্রাটের খেয়ালের বসে অনেক লোকের আত্মহুতির মাধ্যমে দীর্ঘদিন কাজের পর তৈরি হলো সম্রাটের সমাধিক্ষেত্র পিরামিড। স্বৈরশাসকের অন্তিম শয়নের স্থান। বইটি পড়লে প্রতি পাতায় রোমাঞ্চকর অনুভূতি উপলব্ধি সহ সপ্তাশ্চার্যের অন্যতম এই পিরামিড সম্পর্কে অনেক অজানা জানা যাবে।
দ্য আলকেমিস্ট বইটির রিভিউ দেখুন
লেখক পরিচিতিঃ
ইসমাঈল কাদরী 1936 সালে আলবেনিয়ার গিজারো কোষ্টার পর্বতের নিকটবর্তী গ্রীক সীমান্তে জন্মগ্রহন করেন। তিনি অধ্যয়ন করেছেন রাজধানী তিরানা এবং মস্কোর গোর্কি ইনষ্টিটিউটে। তিনি একজন কবি এবং ঔপন্যাসিক হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত। তার অনুবাদ বিশ্ব সমাদিত। তিনি সমাজতান্ত্রিক লেখকদের মাঝে তার কঠিন মতবাদ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। 1990 সালের অক্টোবরে ফ্রান্সে তার এক ভাষনে বলেন,‘স্বৈরতন্ত্র এবং মৌলিক সাহিত্য অসামঞ্জস্যহীন একটি বিষয়।…লেখক হচ্ছেন স্বৈরতন্ত্রের প্রাকৃতিক শত্রু। দ্য পিরামিড উপন্যাসটি ম্যান বুকার পুরষ্কার লাভ করে।
[…] […]