বিছানাকান্দি (Bichanakandi), গোয়াইনঘাট উপজেলা, সিলেট, বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের মধ্যে একটি নয়নাভিরাম ভৌগোলিক পর্যটন কেন্দ্র। বিছানাকান্দি মুলত একটি পাথর খনি, যা ভারত পার্শ্বে পিয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত।
বিছানাকান্দি (Bichanakandi)
হাদারপাড় থেকে মটরচালিত নৌকায় করে বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু থেকে নৌকা যত সামনের দিকে আগাবেন আপনি ততই অবাক হতে থাকবেন। নদীর দুই পাশে চির সবুজ গ্রামের প্রতিচ্ছবি সাথে পাথর শ্রমিকদের পাথর উত্তোলন করে উচু স্তুপ করে সাজিয়ে রাখার দৃশ্য দেখতে পারবেন। আপনি কি দেখবেন স্থির করতে পারবেন না নিজেকে। সামনের দিকে তাকালে হা হয়ে যাবেন মুখ বন্ধ করতে ভুলে যাবেন। সুদূরে স্থির দাঁড়িয়ে থাকা মেঘালয়ের মেঘাচ্ছন্ন পাহাড়ের সারি।
নৌকায় আগাবেন আর দেখবেন আপনি আস্তে আস্তে স্থির শীতল স্বচ্ছ সবুজময় নীলা পানি আর সুবজে ঘেরা সুউচ্চ মেঘাচ্ছন্ন পাহাড় বেয়ে নেমে আসা অসংখ্য ঝর্ণাধারা বইছে এমন একটি জায়গায় নিজেকে আবিস্কার করবেন। আপনি যা ভেবে এখানে আসছেন তা আর তা থাকবে না সম্পূর্ণ অন্যরকম এক অনুভূতি হবে। প্রায় এক ঘন্টা নৌকা ভ্রমণ শেষে যখন পিয়াইন নদীর ওপারে ভারত সীমান্তে পা রাখবেন তখন আবারও মূর্ছা যাবার মত অবাক হবেন। খাসিয়া পর্বত বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণাধারা হ্রদ হয়ে পিয়াইন নদীর সাথে মিশছে। প্রানি প্রবাহের সাথে প্রচুর পাথর আসছে। আর এখানে ছড়িয়ে রয়েছে পাথর আর পাথর। ঝর্ণাধারাটি খুব প্রবল স্রোতস্রীনি আর শীতল।
পাথুরে এই শীতল জল আপনি আলিঙ্গন না করে আর থাকতে পারবেন না। ওই ঝলধারায় আপনি যখন নিজেকে ডুবাবেন আপনি মনে করবেন পৃথিবীর সুখীতম মানব! এতো অসাধারন সুন্দর দৃশ্য যা কোন ফটোগ্রাফার বা কোন ভিডিও নির্মাতা ধারন করে বোঝাতে পারবে না। বিছানাকান্দি আসলে ছবির চেয়েও সুন্দর কল্পনার চেয়েও বাস্তব। ওখানে গিয়ে উপভোগ ছাড়া কোনভাবেই কেউ কাউকে বোঝাতে পারবে না ওখানকার অসাধারন সৌন্দর্য।

যেভাবে যাবেন বিছানাকান্দি
আপনাকে প্রথমে আসতে হবে সিলেট শহরে। ঢাকা থেকে বিমানে, ট্রেনে, বাসে সিলেট আসতে পারেন। প্রতিদিন সকাল 6 টা থেকে রাত 12 পর্যন্ত সায়েদাবাদ, আরামবাগ, কমলাপুর, মহাখালী থেকে নিয়মিত বিরতীতে ইউনিক, শ্যামলী, গ্রীন লাইন, হানিফ, এনা, সোহাগ ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের ভাল ভাল গাড়ি রয়েছে সিলেট রুটে। 450 টাকা থেকে 1200 টাকা পর্যন্ত ভাড়ায় সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগবে 5-7 ঘন্টা।
সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে সিএনজি করে হাদারপাড় যেতে হবে। লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি 100-120 টাকা শুধু যাওয়ার ক্ষেত্রে। রিজার্ভ করে নিয়ে গেলে 1200-1500টাকায় যেতে আসতে পারবেন। একটি সিএনজিতে 4/5 জন যাওয়া যায়। রিজার্ভ নেওয়াই ভালো হবে। নতুবা আসার ক্ষেত্রে ঝামেলা হতে পারে। তাছাড়াও লেগুনা ও মাইক্রোবাস ভাড়া পাবেন। হাদারপাড় নামার পর আপনি নৌকাঘাট পেয়ে যাবেন।
অম্বরখানা থেকে হাদাড়পাড় যেতে আনুমানিক 2 ঘন্টা সময় লাগবে যদি সকাল 7টার মধ্যে রওনা হোন তাহলে সকাল 9 টার মধ্যে হাদারপাড় পৌছাবেন। হাদারপাড় থেকে বিছানাকান্দি যেতে নির্ধারিত ভাড়া প্রতি নৌকা 1550 টাকা। এক নৌকায় 10/12 জন যেতে পারবেন। মটরচালিত এসব নৌকায় বিছানাকান্দি যেতে সময় লাগবে প্রায় 50/60 মিনিট। সকাল প্রায় 10টার দিকে বিছানাকান্দি পৌছাবেন। এখানে 4-5 ঘন্টা সময় কাটাতে পারবেন।
ভ্রমণ শেষে একই নৌকায় হাদাড়পাড় হয়ে সিলেট শহরে বিকেল 5 টা অথবা 6টার মধ্যে ফিরবেন এবং চাইলে ঐদিন ঢাকা বা গন্তব্যে ফিরতে পারবেন।
যদি একদিনের মধ্যে ঘুরে ঢাকায় ফিরতে চান, তাহলে আপনাকে সকালে সিলেট উপস্থিত থাকতে হবে। সে অনুযায়ী সিলেটে যাবার বন্দোবস্ত করে নিবেন। অনথ্যায় সিলেট শহরে হোটেল বন্দোবস্ত করতে হবে।
যেহেতু বিছানাকান্দিতে 4-5 ঘন্টার মত সময় অতিবাহিত করার সুযোগ পাবেন। কারন এখানে থাকার কোন জায়গা নেই। তাছাড়া হাদারপাড় থেকে নৌকায় আসতে-যেতে প্রায় 2 ঘন্টার অধিক সময় অতিবাহিত হয় এবং হাদাড়পাড় হতে সিলেট আসা-যাওয়াতে প্রায় 4 ঘন্টার মতো সময় লাগবে। সে অনুযায়ী আপনার সব মিলিয়ে 10-11 ঘন্টা সময়ের মধ্যে বিছানাকান্দি ভ্রমণ সম্পান্ন হবে। সিলেটে অন্য কোথাও ভ্রমণ পরিকল্পনা না থাকলে একদিনেই বিছানাকান্দি ভ্রমণ সম্পান্ন করতে পারবেন।
বিছানাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সারা বছরই পর্যটকরা বিছানাকান্দি ভ্রমণ করেন এবং সব সময়ই বিছানাকান্দি তার আপন সৌন্দর্য ছড়িয়ে রাখে। তবে এর প্রকৃত রূপ দেখা যায় বর্ষাকালে। তখন বিছানাকান্দিতে মেঘেরা ভেসে বেড়ায়। পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা মেঘ আর ঝর্ণাধারার জলে ডুবে থাকা পাথরগুলো অপার্থিক সৌন্দর্য ছড়ায়। আর টিপ টিপ বৃষ্টি থাকলেতো ওখান থেকে আপনাকে ফিরিয়ে আনা কষ্টকর হবে।

বিছানকান্দি ভ্রমণে প্রয়োজনীয় সতর্কতা
1) সিএনজি ও নৌকা রিজার্ভের ক্ষেত্রে ভালভাবে দরদাম করে নিবেন।
2) অতিরিক্ত একসেট জামা-কাপড় সঙ্গে নিবেন।
3) সতর্কতার সাথে হাটাচলা করতে হবে। পিচ্ছিল পাথরে যেকোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
4) ঝর্ণাধারার প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। উপরের দিকে থাকবেন নীচে অর্থাৎ নদীর দিকে বেশি নামবেন না।
5) সাতার না জানলে আরো সতর্ক থাকতে হবে। স্রোতধারায় কোনভাবেই নামা ঠিক হবে না।
6) দলগতভাবে ভ্রমণ করুন, এতে খরচ অনেকাংশে কম হবে। কমপক্ষে দুইজন একসঙ্গে ভ্রমণ করুন।
7) সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবেন।
8) পাহাড়ে ওঠার চেষ্টা করবেন না, বিএসএফ ক্ষীপ্ত হতে পারে।
9) প্রকৃতি এবং পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
10) ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তুলিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতি পিছ ছবির দরদাম চূড়ান্ত করে নিবেন।
See in English Bichankandi