লাল সন্ত্রাস’ বইটি মূলত সিরাজ সিকদার ও উনার সর্বহারা পার্টির উপর তথ্য উপাত্ত ভিত্তিক একটি নন-ফিকশন বই।
১৯৬৮ সালে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে তৈরি হয় পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন, যা পরে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টিতে রূপান্তরিত হয়। তরুণদের একটি বড় অংশ এই দলের সশস্ত্র রাজনীতির ধারায় শামিল হন। বাংলাদেশের সর্বহারা রাজনীতির তত্ত্ব, রূপকল্প ও কর্মসূচি এবং একঝাঁক মেধাবী তরুণের স্বপ্নযাত্রা ও স্বপ্নভঙ্গের গল্প এ বইয়ে তুলে ধরেছেন অনুসন্ধানী গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ।
লাল সন্ত্রাস : সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা রাজনীতি রিভিউ
সিরাজ সিকদার বিশ্বাস করতেন যে, গনতন্ত্রের/পুজিবাদের মাধ্যমে কখনো সাধারণ মানুষের মুক্তি আসবে না। সাধারণ মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে সমাজতন্ত্র। এবং সেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে তিনি চীনের মাও সেতুং কে অনুসরণ করতেন। তার কার্যক্রমের সাথে পশ্চিমবঙ্গের নকশালদের কার্যক্রমের মিল ছিলো।
বইটি মূলত দুই পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে বর্ণনা করার চেষ্টা হয়েছে কেমন করে ভারতীর বামপন্থী সশস্ত্র বিপ্লব পূর্ববাংলার তরুনদের মনে প্রভাব বিস্তার করেছিলো, কেমন করে পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন থেকে তৈরী হয় পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি, তারপর এলো মুক্তিযুদ্ধ, দেখানো হল যুদ্ধের পরও যাদের বিপ্লব শেষ হয়নি তাদের কর্মকান্ড, এলো অনৈক্য, ফ্যান্টাসি, আবারও লড়াই, সিরাজ সিকদারের মৃত্যু এবং দলের ভাঙন। দ্বিতীয় পর্বে এসেছে দলে কর্মী, সহানুভুতিশীল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের কথা, তাদের চোখে দলের ওই সময়কার কর্মকান্ডের বিশ্লেষণ ও সাক্ষাৎকার ও লিখিত বক্তব্য।
বাংলাদেশের কিছু বিখ্যাত ব্যাক্তি যে অতীতে সর্বহারা পার্টির সাথে জড়িত ছিলো তা এই বই পড়ে জানা যায়।
অনেক বিস্ফোরক তথ্যে ঠাসা পুরো বইটা। রাজনীতি পছন্দ করেন, এমন যে কারো জন্যই এইটা রেকমেন্ডেড। তবে আগে জাসদ বইটা পড়লে ভালো হবে। পাশাপাশি, প্রতিনায়কও একই সময়ের গল্প। পড়লে পূর্ণতা পাবে চিত্রটা।
বাংলাদেশ রক্তের ঋণ: সত্য কল্পকাহিনি থেকে অদ্ভুত
‘লাল সন্ত্রাস’ নাম নিয়ে অনেকে কিছুটা দ্বিধায় ভুগছেন। ধরে নিয়েছেন বইয়ের নামেই সিরাজ সিকদারকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা হচ্ছে। কিন্তু আদতে নামটা কতোটা পারফেক্ট, সেটা পৃথিবীর কমিউনিস্ট আন্দোলন, লাল-সাদা তত্ত্ব তথা নানা পরিভাষা জানা থাকলে বোঝা যায়।
সবশেষে বইটি বেশ সুখপাঠ্য। বইয়ে সর্বহারা পার্টির সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বের কিছু ছবি দেয়া আছে যা কল্পনা করতে সহায়তা করে। বামপন্থী রাজনীতি নিয়ে আগে থেকেই কিছু বোঝাপড়া থাকলে এই বই পড়তে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলতে হবে না। পুর্ববাংলার একঝাক তরুন কেমন করে বিপ্লবের ডাকে সাঁড়া দিয়েছিলো এবং কি তাদের পরিণতি তা একটুখানি আঁচ করা যায় এই বই থেকে।
সিরাজ সিকদার চট্টগ্রাম থেকে পুলিশের কাছে ধরা পরে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭৪। ১৭৭৫ সালের ২ জানুয়ারি সিরাজ সিকদার মারা যান ক্রসফায়ারে। পুলিশের ভাষ্যমতে সিরাজ সিকদার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কালে তাকে গুলি করা হয়।
বই: লাল সন্ত্রাস : সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা রাজনীতি
লেখক: মহিউদ্দিন আহমদ
প্রকাশনা: বাতিঘর
পৃষ্ঠা: ৪২১
সূত্র: গুডরিডস