লা মিজারেবল, ভিক্টর হুগো’র এই সেরা উপন্যাসটি 1862 সালে বেলজিয়াম থেকে এক যোগে 9টি ভাষায় প্রথম প্রকাশ হয়েছিল। বইটিকে উনিশশ শতাব্দীর সেরা উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বইয়ের কাহিনী জুন বিপ্লবের পটভূমিতে লেখা।
লা মিজারেবল রিভিউ
ফ্রান্সের ছোট্ট একটি শহরের নাম ব্রাই। এই শহরেই জন্ম উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র জাঁ ভালজাঁ’র। খাটুনিকে ভয় পায় না সে। বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সে। দেখতে ছোটখাট এক দৈত্যের মত হয়েছে। প্রচণ্ড শক্তি দেহে, চারজনের কাজ একাই করতে পারে অনায়াসে। কিন্তু আকারে-গঠনে যাই হোক, মনটা খুবই কোমল জাঁ ভালজাঁর। মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখলে মন কাঁদে। ভাল করে জ্ঞান হবার আগেই মাকে হারায়। বাবা কাঠ বিক্রি করে কোনমতে সংসার চালাতেন। খুব গরীব ছিলেন। কয়েক বছরের বড় একটি বোন ছিল ভালজাঁর। ওদেরই মত গরীবের সাথে তাকে বিয়ে দেয়া হলো। কিছুকাল পর বাবাও মারা গেলেন। একা হয়ে গেল ভালজাঁ।
বড় বোন বাধ্য তাকে আশ্রয় দিল নিজের সংসারে। তার সংসারের অবস্থা ভীষণ শোচনীয়। অবর্ণনীয় অভাব সেখানে। কারণ ততদিনে সে সাত-সাতটি সন্তানের মা হয়েছে। বড়টির বয়স সবে আট, আর ছোটটির মাত্র এক। সংসারে নাই নাই খাই খাই লেগেই আছে, নিত্য অশান্তি আর খিটিমিটি। জাঁ ভালজাঁর বয়স যখন পঁচিশ, হঠাৎ তার ভগ্নিপতি মারা গেল। বাজ পড়লে বোনের সংসারে। কাজের খোজে বেড়িয়ে পড়লো ভালজাঁ। যখন যা জোটে, তাই করতে লেগে গেল।
সংসারের নির্দয় যাতাকলে নিষ্পেষিত হতে থাকলো সে। সেবার দেশে তেমন ফলন হয়নি, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, অকাল দেখা দিল। ভালজাঁর কাজের চাপ কমে গেল। অভাব ঝেকে বসল। ভাগ্নে-ভাগ্নিরা সব শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে গেল। ভালজাঁ মামা হয়ে সহ্য করতে না পেরে একটি রুটির দোকান থেকে দুটি রুটি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লো। চুরির অপরাধে সশ্রম কারাদণ্ড হিসেবে ভালজাঁকে জাহাজের দাঁড় বাইতে হবে পাঁচ বছর। 1796 সাল বাষ্পীয় ইঞ্জিন তখনো আবিষ্কার হয়নি, কেউ স্বেচ্ছায় দাড় বাইত না।
যুদ্ধবন্দী আর ভালজাঁর মত সশ্রম দণ্ডে দণ্ডিতদের দিয়ে করানো হত কাজটা। পায়ে লোহার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতো আর ক্ষনে ক্ষনে চাবুক মারা হতো। একসময় সহ্য করতে না পেরে পালায় কিন্তু ধরা পড়ে যায় এবং শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় এভাবে পাঁচ বছরের সাজা উনিশ বছর খেটে এসেছিল 1815 সালে অক্টোবর মাসে ছেচল্লিশ বছরের প্রৌঢ় হয়ে। জেল থেকে বের হয়েও শান্তি পেলো না, সব জায়গায় প্রত্যাখাত হয়ে হতাশ পড়েছিল ভালজাঁ, তখন তার জীবনে আশার প্রদীপ হয়ে আসেন বিশপ মিরিয়েল। তার কাছ থেকে পাওয়া সাহায্যে অলঙ্কারের ব্যবসা করে অল্প সময়ে ধনী হয়ে যায় জাঁ ভালজাঁ।
উপন্যাসের নায়িকা কোজেত
কোজেত এই উপন্যাসের নায়িকা। ঘটনাচক্রে ভালজাঁ তাকে পালক কন্যা হিসেবে পায়। নিঃস্ব জীবনে কোজেতকে প্রচণ্ড ভালবাসায় আগলে রাখে। কোজেত তাকে দিল এক অনাস্বাদিত স্বাদ। বিনিময়ে জীবনের অর্জিত সমস্ত সম্পদ তুলে দিল তার সুখের জন্যে। এক সময় কোজেত মারিয়াস নামক এক যুবককে বিয়ে করে চলে যায়। মারিয়াস ভালজাঁকে ভুল বোঝে, ভালজাঁ তখন পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। বুকভরা কষ্ট নিয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানানোর অপেক্ষায় থাকে জাঁ ভালজাঁ।

বিশাল এই উপন্যাসে শুধু ভালজাঁর গল্প নয়। এই উপন্যাসটিতে পানির মতো কিছু অসাধারন চরিত্র বিশপ মিরিয়েল, থেনারদিয়ের, ফাঁতিন, এপোনাইন, জ্যাভারসহ প্রচুর চরিত্রের আবির্ভাব রয়েছে। যা উপন্যাসটিকে করেছে এক কথায় অসাধারন। উপন্যাসটি ব্যপক জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে ও সর্ব মহলের মন জয় করেছিল। সেসময় ফ্রান্সে লঘু পাপে গুরু দণ্ড দেওয়া হতো। তার ফলাফল যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা এই ‘লা মিজারেবল’ উপন্যাসে অসাধারনভাবে তুলে ধরেন ভিক্টর হুগো।
দ্য দা ভিঞ্চি কোড: নম্বর ওয়ান থৃলার উপন্যাস
লা মিজারেবল নিয়ে মন্তব্য
উপন্যাসটি পড়ে বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি আলফ্রেড টেনিসন হুগোকে ‘লর্ড অব হিউম্যান টিয়ার্স’ আখ্যা দিয়েছিলেন, জর্জ মেরেডিথের মতে, এটি সেই শতাব্দীর সেরা উপন্যাস। মিল্টন উপন্যাসটিকে পবিত্র বাইবেলের সাথেই তুলনা করেছিলেন। বিশ্ব সাহিত্যে ভিক্টর হুগোর এই উপন্যাসটি সেরা শিল্পকর্ম হিসেবে সগৌরবে স্থান করে নিয়েছে এই ‘লা মিজারেবল’।
লেখক পরিচিতি
ভিক্টর হুগো (Victor-Marie Hugo; ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৮০২ – মে ২২, ১৮৮৫) ছিলেন একজন ফরাসি সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ এবং মানবাধিকারকর্মী। তাকে উনিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী রোমান্টিক লেখক বলা হয়ে থাকে।
বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন রকমারি থেকে