বাংলা সাহিত্যের সেরা উপন্যাস বাছাই করা খুবই দুঃসাধ্য। বহুদিন ধরে ভাবছি সেরা উপন্যাস এর একটি তালিকা তৈরি করবো। তালিকা করতে গিয়ে উপলব্ধি করলাম এভাবে উপন্যাস তালিকা তৈরির করার উপযুক্ত লোক আমি নই। তালিকা হয় দীর্ঘ না হয় অবিচার। তবুও লোভ কষ্ট সংবরণ করে আমার পছন্দের ক্রমানুসারে 10টি সেরা উপন্যাসের তালিকা সাজিয়েছি।
10টি সেরা উপন্যাস তালিকা করা হলোঃ
1. আগুনপাখি – হাসান আজিজুল হক

2006 সালে প্রকাশিত “আগুনপাখি” ভারত বিভাগের পটভূমিতে রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। জীবনের ভেতরের জীবন, ইতিহাসের ভেতরের ইতিহাস, অন্তরের ভেতরের অন্তর, রাজনীতির ভেতরের রাজনীতি, সমাজের ভেতরের সমাজ, পরিবারের ভেতরের পরিবার, জীবনের ভেতরের জীবনের রহস্য উদ্ঘাটনের দক্ষ ডুবুরি হাসান হাসান আজিজুল হক আদায় করে নিলেন সংস্কৃতিবোধ সম্পন্ন অগণিত বাঙালির স্যালুট!
2. নৌকাডুবি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গল্পের নায়ক যখন বিয়ে করে বাড়ি ফিরছিলেন নৌকায় করে সেইদিন আরও কয়েকটি বিয়ের নৌকা নদীতে আসছিল, কিন্তু, হঠাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগে নৌকা ডুবে যায়। যখন নায়ক জ্ঞান ফিরে পায় তখন অনতিদূরে একজন পত্নীকে দেখতে পান, কিন্তু তখনকার দিনে আগে থেকে পত্নীকে দেখার নিয়ম ছিল না, তাই ওই পত্নী কি তার বিয়ে করা পত্নী নাকি এই পত্নী অন্য কোনো নৌকার যাত্রী ছিল?? এটা বুঝতে পুরো উপন্যাস পড়তে হবে। ভাষা শৈলী , রোমান্টিকতা, এবং কিছুটা মনস্তাত্বিক ধরনের লেখা আপনি এক নিশ্বাসে শেষ করতে চাইবেন।
3. পথের পাঁচালী —বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথের পাঁচালী হলো প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি বিখ্যাত উপন্যাস। বই পড়ে আপ্লুত হওয়ার মত বই। একবার পড়ে দ্বিতীয়বার পথের পাচালি পড়ার সাহস হয় না। এই উপন্যাসটি অবলম্বনে পথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র) নির্মান করেন যা দর্শকদের কাছে ব্যাপক সাড়া পায়। তাই পাঠক দেরি না করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা এই উপন্যাসটি এখনই পড়ে ফেলুন।
4. দেবদাস – শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়

দেবদাস বাঙালি প্রেমিক সমাজের কাছে এক অতি পরিচিত নাম। দেবদাস নামটি র মাঝে লুকিয়ে আছে পরিপূর্ণ এক প্রেমিক সত্তা। জমিদার পুত্র দেবদাস ও পাশের বাড়ির মধ্যবর্তী পরিবারের পার্বতী একে অপরের সহপাঠি ও খেলার সঙ্গী। মনে মনে দুজন দুজনকে ভালবাসতো। জাত-পাতের কারনে পার্বতী বিপত্নীক জমিদার ভুবনকে বিয়ে করে চলে যায়। পার্বতীর বিয়ের পর প্রেমের আগুনে দেবদাসের হৃদয় পুড়তে থাকে। দেবদাস তার প্রিয় পার্বতীকে একবার দেখার জন্য তার শশুরবাড়ি পর্যন্ত পৌছায় কিন্তু পারুর সাথে দেখা হবার আগেই দেবদা মারা যায়। শুধু প্রেমিক না সাহিত্যপ্রেমিকদেরও এমন অসাধারন সেরা উপন্যাস’টি একবার হলেও পড়া উচিত।
5. শ্রীকান্ত -শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

এই উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র শ্রীকান্ত, তার জীবনে ও চলার পথে প্রবেশ করেছে নানান নারী চরিত্র- অন্নদাদিদি, পিয়ারী, রাজলক্ষী, অভয়া, সুনন্দা, কমললতা সকলেই প্রাতিস্বিকতায় আলাদা। স্বাভাবিক সামাজিক অস্থিরতায় আচ্ছন্ন শ্রীকান্ত কোথায় বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি- কোনো নারীর মনেও না; কোনো নারীর জন্যও না। কিন্তু একধরনের স্মৃতিকাতরতা তার মধ্যে ছিল।
6. মধ্যাহ্ন – হুমায়ুন আহমেদ

বাস্তবতার সঙ্গে অসম্ভবের সন্ধি হুমায়ূন আহমদের প্রিয় কৌশল যা মধ্যাহ্ন উপন্যাসেও লেখক দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন। নানা অলৌকিক ও আধিভৌতিক কাহিনীকণাকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রশ্রয় দিয়ে লেখক প্রমাণ করেছেন তিনি জাদু বাস্তবতার দক্ষ কারিগর। অন্যান্য অনেক রচনার মতো এ উপন্যাসেও অসম্ভবের বহুবর্ণ উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। নিঃসন্দেহে ‘মধ্যাহ্ন’ লেখকের সেরা উপন্যাস এর মধ্যে অন্যতম প্রধান উপন্যাস এটি।
7. সাতকাহন – সমরেস মজুমদার

সাতকাহন একটা দীর্ঘ রচনা। একে অল্প কথায় সীমাবন্ধ করে তুলে ধরা দুষ্কর। অন্তত জীবনের জটিলতা বোঝার তাগিদের জন্যে হলেও বাঙালী প্রতিটি নারীকে তার জীবনের শুরুর দিকে একটিবার হলেও এই উপন্যাসটি পড়া প্রয়োজন বলে মনে করি। বইটা শেষ করবার পর দীপাবলি চরিত্রটি আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করেছিল।
8. চাঁদের পাহাড় – বিভূতিভূষণ বন্দ্যাপাধ্যায়

দুঃসাহাসিক, রোমাঞ্চকর, অভিযাত্রিক কাহিনী যারা পড়তে ভালবাসেন বা আগে পরেননি “চাঁদের পাহাড়” তাদের জন্য অত্যন্ত রোমাঞ্চর একটি সেরা উপন্যাস। উপন্যাসটি পড়ার সময় প্রতিটি লাইনে প্রতিটি মুহুর্তে এই উপন্যাসের নায়ক শঙ্করের সহযোদ্ধা মনে হবে। এই উপন্যাসের মাধ্যমে স্বপ্নের সত্যতা অনুসন্ধান, ভাগ্যের বিপর্যয়, প্রকৃতির প্রতিকূলতার সাথে প্রতিনিয়ত মানুষের যে লড়াই, যে সাহস, ধৈর্য্য, আত্মপ্রত্যয় ও বীরত্বের নিকট পরাজিত হতে পারে সকল প্রতিকুলতা। উপন্যাসটি পড়ে আফ্রিকার অনেক জানা- অজানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জন্তু-জানোয়ার, পাহাড়-পর্বত, মরুভূমি ইত্যাদি সম্পর্কে এমন জানা যাবে যেন পাঠক এক রুদ্ধঃশাস অভিযান করে আসছে। অসাধারণ এই উপন্যাসটি না পড়ে না থাকলে অবশ্যই পড়া উচিত।
9. হাঁসুলী বাঁকের উপকথা (১৯৪৭) – তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়

হাঁসুলী বাঁকের উপকথা হল তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিত একটি আঞ্চলিক সেরা উপন্যাস। প্রকাশ কাল ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ। উপন্যাসটি গ্রামীণ বাংলার জীবন, জমিদারী ব্যবস্থার বাস্তবতা ও পাশাপাশি সময়ের সাথে সামাজিক ধারণার পরিবর্তনগুলিকে অন্বেষণ করে। ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ উপন্যাসখানি মহাকাব্যিক পদমর্যায় উন্নীত।
10. পদ্মানদীর মাঝি – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

এই উপন্যাসটি নিম্নবিত্ত জেলেদের জীবনোপাখ্যান। উচ্চ মাধ্যমিকে পাঠ্য ছিলো। কুবের মাঝি, তার স্ত্রী মালা, শ্যালিকা কপিলা, রহস্যময় চরিত্র হোসেন মিয়া প্রভৃতি চরিত্র সব সময় বাস্তব মনে হয়, সাহিত্য ভালোবাসেন কিন্তু পদ্মানদীর মাঝি পড়েননি,এমন একজনও বাঙালি বোধ হয় খুজে পাওয়া যাবেনা । এটি একটি সেরা উপন্যাস।
20টি নিখুঁত ডিজাইনের সেরা বুকশেলফ ও বুককেস
পৃথিবীর অন্যতম বহুভাষাবিদ জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর একটি ঘটনা পড়লেই বুঝা যাবে বই পড়া আমাদের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রতিদিন কমপক্ষে ১৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন। কারণ তিনি জানতেন বই পড়া ছাড়া কোনভাবেই জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়।বই ছিল তার একমাত্র বন্ধু। বই ছিল তার নিত্যসঙ্গী। শহীদুল্লাহ একদিন পাঠাগারের এক কোনায় বসে বই পড়ছেন পড়ছেন তো পড়ছেনই, বইয়ের মাঝে ডুবে একাকার হয়ে আছেন। তিনি পাঠাগারের এক কোনায় বসে পড়তে থাকায় পাঠাগার কর্তৃপক্ষ পাঠাগার বন্ধ করার সময় হলে তাকে লক্ষ্য না করে পাঠাগার বন্ধ করে চলে গেলেন। কিন্তু শহীদুল্লাহ বিরামহীনভাবে পড়ছেন, কোন সময় পাঠাগার বন্ধ করা হলো তা তিনি টেরই পেলেন না।যত বড়ই বই হোক না কেন, শহীদুল্লাহ একবারে শেষ না করে কোনোভাবেই উঠতেন না। যা হোক পরদিন রীতিমত পাঠাগার খোলা হলো। খোলামাত্র পাঠাগার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে তিনি পড়লেন। কর্তৃপক্ষ তাকে দেখে তো হতবাক। শহীদুল্লাহকে তিনি প্রশ্ন করলেন, আপনি পুরো রাতদিন পাঠাগারে বন্দি ছিলেন? তখন শহীদুল্লাহর বই পড়ার ধ্যান ভেঙে গেল এবং মুখ খুলে বললেন অবচেতন মনে ‘না তো, আমি বই পড়ছিলাম।‘
[…] বাংলা সাহিত্যের 10টি সেরা উপন্যাস […]